ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

বাঙালি বিদেশি শাসনকালে, স্বতন্ত্র মুদ্রা ব্যবহার করতো ।


১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজি বঙ্গে আক্রমণ  করে বঙ্গের কিছু অংশ বিজয় করে। অবশ্য বিজয়টি নামেমাত্র, তাদের সম্পূর্ণ বঙ্গকে করায়ত্ত করতে আরও বহু সময় লেগে যায়। তুর্কি, পাঠান বৈদেশিক সাম্রাজ্যবাদী শাসনের পরম্পরায় পরবর্তীতে এদেশে শাসক হয়ে আসে ব্রিটিশরা। এ সকল বৈদেশিক শাসকই এদেশের তাদের নিজস্ব মুদ্রা প্রবর্তন করে। যে মুদ্রায় থাকতো তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্য। দুই একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত ছাড়া, এদেশের ধর্ম সংস্কৃতির কোন প্রভাব ছিলো না বৈদেশিক শাসকদের প্রবর্তিত সেই মুদ্রায়।পরাধীন সময়ে এদেশীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বৈদেশিক শাসকদের থেকে এদেশের ধর্ম সংস্কৃতি রক্ষার আপ্রাণ প্রচেষ্টা শুরু করে। শাসক যেহেতু বিদেশী, তারা তো এদেশীয় ধর্ম সংস্কৃতির সমাদর করবে না, এটিই স্বাভাবিক। তখন এদেশের মানুষেরা সর্বক্ষেত্রেই তৈরি করে, বৈদেশিক শাসকদের প্রত্যেকটি পদক্ষেপের সমানতালে একটি বিকল্প পন্থা। মুদ্রার ক্ষেত্রেও এদেশের মানুষের এমন একটি বিকল্প পন্থার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীরা যেহেতু তাদের ধর্ম এবং সংস্কৃতির আলোকে মুদ্রা তৈরি করেছে। এরই বিকল্প পন্থা হিসেবে সোনা, রূপা এবং এবং তামায় নিজেদের দেবদেবী খোদিত করে ধাতব মুদ্রা তৈরি করে হিন্দু সম্প্রদায়। এ মুদ্রাকে কাঁচাটাকাও বলা হয়। ধাতুতে ডাইশের ছাপ দিয়ে এগুলো তৈরি করা হত। যেহেতু স্থানীয়ভাবেই মুদ্রাগুলো তৈরি।তাই মুদ্রাগুলোর মধ্যে মসৃণতা যথেষ্ট অভাব। তবে কারিগরের দক্ষতার উপরেই নির্ভর করতো মুদ্রাগুলোর সৌন্দর্য।   শাসকের নিজস্ব মুদ্রার সাথে, সমানতালে ব্যক্তিগতভাবে বিয়ে সহ আধ্যাত্মিক মাঙ্গলিক সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হত এ নিজস্ব মুদ্রা। বর্তমানে আজও বহু সম্ভ্রান্ত বাঙালি হিন্দু পরিবারে এ মুদ্রাগুলোর ব্যবহার দেখা যায়। মুদ্রাগুলোর অধিকাংশই ১৯৪৭ সালের দেশভাগ এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে লুঠ হয়ে যায়। ১৯৯০, ১৯৯২ সালের সালের সাম্প্রদায়িক আক্রমণে এ লুণ্ঠনকারীরা এ মুদ্রাগুলো লুঠ করে নিয়ে যায়।সকল আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানে সিঁদুর রঞ্জিত করে ছাপ দেয়া হত এ মুদ্রা দিয়ে। বিয়ে ঠিক হলে, আশীর্বাদের দিনে উভয়পক্ষের সম্মতিতে যে পাতিপত্র তৈরি করা হত, সে পাতিপত্রে এ মুদ্রার ছাপ দেয়া হত। পাতিপত্রের মধ্যে বর-কনের বিয়ের দিনক্ষণ, ঠিকানা সহ দুইপক্ষের সকল তথ্য লিখিত থাকব। ছাপটি সিলমোহরের কাজ করত। এ মুদ্রার ছাপসহ পাটিপত্রটি পরবর্তীতে বিয়ের প্রমাণপত্র হিসেবে গণ্য হত। নববর্ষে হালখাতা উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা হিসাবের যে নতুন খাতা খুলতেন, সেই খাতায় এই দেবদেবী খচিত কাঁচাটাকার সিঁদুরের ছাপ দেয়া হতো। এই সোনারূপার দেবদেবী খচিত কাঁচাটাকার ছাপটি অত্যন্ত মাঙ্গলিক এবং শুভ বলে বিবেচিত। দুর্গাপূজার বিজয়াদশমীতে দেবীকে বিদায়কালে এই কাঁচাটাকা দেবীর পায়ে স্পর্শ করিয়ে সারাবছরের সম্পদ সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। বাঙালি নারীদের মাঙ্গলিক প্রত্যেকটি কর্মে, পূজায়, পার্বণে কুলায় বা বরণডালায় এই দেবদেবী খচিত কাঁচাটাকা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেই প্রাচীন ধারাবাহিকতা আজও চলছে।  এই ধাতব মুদ্রার মধ্যে একটি সম্প্রীতির ভাব পরিলক্ষিত হয়। কোন মুদ্রার একপাশে শিব এবং অন্যপাশে বিষ্ণু। আবার কোন মুদ্রায় একপাশে রামসীতা এবং অন্যপাশে রাধাকৃষ্ণ। বিয়েতে সাধারণত এই মুদ্রাগুলো বেশি ব্যবহৃত হত। আবার কখনো একপাশে কালী এবং অন্যপাশে দুর্গা অথবা লক্ষ্মী। অনেক ঝড়-ঝাপটা অতিক্রম করে আমাদের পরিবারের পারিবারিক সংরক্ষিত রয়েছে এমন কয়েকটি দেবদেবী খচিত মুদ্রা।এর মধ্যে একটি মুদ্রার একপাশে কালী, অন্যপাশে কৃষ্ণ। বাঙালির প্রধান দুই উপাস্য। বাংলা এবং দেবনাগরী লিপিতে খোদিত তাঁদের নাম।প্রাচীন এ মুদ্রাটি শাক্ত বৈষ্ণব সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন। এ মুদ্রাগুলোর হয়তো তৎকালীন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছিলো না। কিন্তু বৈদেশিক শাসকদের স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে এদেশীয়দের কোন সামান্যতম ভ্রুক্ষেপ ছিলো না। তারা তাদের মত করে তৈরি করে নেয় ধাতবমুদ্রা, যা সকল মাঙ্গলিক আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হত। এর প্রধান কারণ হলো, এই মুদ্রাগুলোর সাথে এই ভূখণ্ডের মানুষের ধর্ম, সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসের একটি নিবিড়  যোগসূত্র ছিলো। নিজস্ব সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার একটি আপ্রাণ প্রচেষ্টা ছিলো। শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।


















১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজি বঙ্গে আক্রমণ করে বঙ্গের কিছু অংশ বিজয় করে। অবশ্য বিজয়টি নামেমাত্র, তাদের সম্পূর্ণ বঙ্গকে করায়ত্ত করতে আরও বহু সময় লেগে যায়। তুর্কি, পাঠান বৈদেশিক সাম্রাজ্যবাদী শাসনের পরম্পরায় পরবর্তীতে এদেশে শাসক হয়ে আসে ব্রিটিশরা। এ সকল বৈদেশিক শাসকই এদেশের তাদের নিজস্ব মুদ্রা প্রবর্তন করে। যে মুদ্রায় থাকতো তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্য। দুই একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত ছাড়া, এদেশের ধর্ম সংস্কৃতির কোন প্রভাব ছিলো না বৈদেশিক শাসকদের প্রবর্তিত সেই মুদ্রায়।পরাধীন সময়ে এদেশীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বৈদেশিক শাসকদের থেকে এদেশের ধর্ম সংস্কৃতি রক্ষার আপ্রাণ প্রচেষ্টা শুরু করে। শাসক যেহেতু বিদেশী, তারা তো এদেশীয় ধর্ম সংস্কৃতির সমাদর করবে না, এটিই স্বাভাবিক। তখন এদেশের মানুষেরা সর্বক্ষেত্রেই তৈরি করে, বৈদেশিক শাসকদের প্রত্যেকটি পদক্ষেপের সমানতালে একটি বিকল্প পন্থা। মুদ্রার ক্ষেত্রেও এদেশের মানুষের এমন একটি বিকল্প পন্থার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীরা যেহেতু তাদের ধর্ম এবং সংস্কৃতির আলোকে মুদ্রা তৈরি করেছে। এরই বিকল্প পন্থা হিসেবে সোনা, রূপা এবং এবং তামায় নিজেদের দেবদেবী খোদিত করে ধাতব মুদ্রা তৈরি করে হিন্দু সম্প্রদায়। এ মুদ্রাকে কাঁচাটাকাও বলা হয়। ধাতুতে ডাইশের ছাপ দিয়ে এগুলো তৈরি করা হত। যেহেতু স্থানীয়ভাবেই মুদ্রাগুলো তৈরি।তাই মুদ্রাগুলোর মধ্যে মসৃণতা যথেষ্ট অভাব। তবে কারিগরের দক্ষতার উপরেই নির্ভর করতো মুদ্রাগুলোর সৌন্দর্য।

শাসকের নিজস্ব মুদ্রার সাথে, সমানতালে ব্যক্তিগতভাবে বিয়ে সহ আধ্যাত্মিক মাঙ্গলিক সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হত এ নিজস্ব মুদ্রা। বর্তমানে আজও বহু সম্ভ্রান্ত বাঙালি হিন্দু পরিবারে এ মুদ্রাগুলোর ব্যবহার দেখা যায়। মুদ্রাগুলোর অধিকাংশই ১৯৪৭ সালের দেশভাগ এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে লুঠ হয়ে যায়। ১৯৯০, ১৯৯২ সালের সালের সাম্প্রদায়িক আক্রমণে এ লুণ্ঠনকারীরা এ মুদ্রাগুলো লুঠ করে নিয়ে যায়।সকল আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানে সিঁদুর রঞ্জিত করে ছাপ দেয়া হত এ মুদ্রা দিয়ে। বিয়ে ঠিক হলে, আশীর্বাদের দিনে উভয়পক্ষের সম্মতিতে যে পাতিপত্র তৈরি করা হত, সে পাতিপত্রে এ মুদ্রার ছাপ দেয়া হত। পাতিপত্রের মধ্যে বর-কনের বিয়ের দিনক্ষণ, ঠিকানা সহ দুইপক্ষের সকল তথ্য লিখিত থাকব। ছাপটি সিলমোহরের কাজ করত। এ মুদ্রার ছাপসহ পাটিপত্রটি পরবর্তীতে বিয়ের প্রমাণপত্র হিসেবে গণ্য হত। নববর্ষে হালখাতা উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা হিসাবের যে নতুন খাতা খুলতেন, সেই খাতায় এই দেবদেবী খচিত কাঁচাটাকার সিঁদুরের ছাপ দেয়া হতো। এই সোনারূপার দেবদেবী খচিত কাঁচাটাকার ছাপটি অত্যন্ত মাঙ্গলিক এবং শুভ বলে বিবেচিত। দুর্গাপূজার বিজয়াদশমীতে দেবীকে বিদায়কালে এই কাঁচাটাকা দেবীর পায়ে স্পর্শ করিয়ে সারাবছরের সম্পদ সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। বাঙালি নারীদের মাঙ্গলিক প্রত্যেকটি কর্মে, পূজায়, পার্বণে কুলায় বা বরণডালায় এই দেবদেবী খচিত কাঁচাটাকা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেই প্রাচীন ধারাবাহিকতা আজও চলছে।

ই ধাতব মুদ্রার মধ্যে একটি সম্প্রীতির ভাব পরিলক্ষিত হয়। কোন মুদ্রার একপাশে শিব এবং অন্যপাশে বিষ্ণু। আবার কোন মুদ্রায় একপাশে রামসীতা এবং অন্যপাশে রাধাকৃষ্ণ। বিয়েতে সাধারণত এই মুদ্রাগুলো বেশি ব্যবহৃত হত। আবার কখনো একপাশে কালী এবং অন্যপাশে দুর্গা অথবা লক্ষ্মী। অনেক ঝড়-ঝাপটা অতিক্রম করে আমাদের পরিবারের পারিবারিক সংরক্ষিত রয়েছে এমন কয়েকটি দেবদেবী খচিত মুদ্রা।এর মধ্যে একটি মুদ্রার একপাশে কালী, অন্যপাশে কৃষ্ণ। বাঙালির প্রধান দুই উপাস্য। বাংলা এবং দেবনাগরী লিপিতে খোদিত তাঁদের নাম।প্রাচীন এ মুদ্রাটি শাক্ত বৈষ্ণব সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন। এ মুদ্রাগুলোর হয়তো তৎকালীন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছিলো না। কিন্তু বৈদেশিক শাসকদের স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে এদেশীয়দের কোন সামান্যতম ভ্রুক্ষেপ ছিলো না। তারা তাদের মত করে তৈরি করে নেয় ধাতবমুদ্রা, যা সকল মাঙ্গলিক আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হত। এর প্রধান কারণ হলো, এই মুদ্রাগুলোর সাথে এই ভূখণ্ডের মানুষের ধর্ম, সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসের একটি নিবিড় যোগসূত্র ছিলো। নিজস্ব সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার একটি আপ্রাণ প্রচেষ্টা ছিলো।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁