ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

নেতৃত্বেকে ভোঁদড়ের স্বভাব, আগে পরিত্যাগ করতে হবে।

 

নেতৃত্বেকে ভোঁদড়ের স্বভাব, আগে পরিত্যাগ করতে হবে ভারতীয় উপমহাদেশে ভোঁদড় বা উদবিড়াল নদী খালসহ বিভিন্ন জলাশয়ে দেখা যায়। তারা মূলত মসৃন ত্বকের মৎস্যভোজী মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণী। বর্তমানে এ ভোঁদড়দের সংখ্যা দিনেদিনেই কমে যাচ্ছে। মাছই এদের অত্যন্ত প্রিয় এবং প্রধান খাদ্য। সর্বদা জলাশয়ে এরা মাছ খুঁজে বেড়ায়। অনেক জেলে মাছ ধরার জন্য ভোঁদড়দের পোষ মানায়। হ্রদ ও নদীর তীর, বড় পুকুর, খাল, প্লাবনভূমি, খাড়ি ও মোহনার কিনারে ভোঁদড়েরা থাকে। এরা জোড়ায় জোড়ায় মিলে মাছ ধরে বেড়ায়।জলে এরা মাছ তেমন একটা খায় না। এদের এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে জেলেরা তাদের দিয়ে মাছ শিকার করে। ভোঁদড়দের গলায় দড়ি বেধে জলে ফেলে একজনকে দিয়ে মাছের দলকে তাড়িয়ে,অন্য জনকে দিয়ে মাছ শিকার করায়। পরবর্তীতে নৌকায় কিংবা পাড়ে ফিরে এলে তাদের কয়েকটি মাছ শিকারের পুরষ্কার স্বরূপ খেতে দেয়। ভোঁদড় কিন্তু মাছ খেয়েই বাঁচে, কিন্তু এর পরেও ভোঁদড়ের শিকার করা সিংহভাগ মাছ নিয়ে যায় তার মনিব জেলে। বাংলাদেশ কিছু কিছু অঞ্চল বিশেষ করে বরিশাল, ফরিদপুর, খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ শিকার করে আসছে। একসময় এই ভোঁদড়দের নিয়ে সুন্দরবনের গভীরে মাছ শিকার করতেন জেলেরা। এখনো করা হয়। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে ভোঁদরের সংখ্যা এমন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে যে, আগামী দুইদশকের মধ্যে হয়ত ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করা একপ্রকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলা চলে।  ভোঁদড়েরা যেমন নিজের মুখের গ্রাস নিজে না খেয়ে প্রভুকে খুশী করতে প্রভুর কাছে তুলে দেয়। তেমনি সকল জাতি এবং সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে একপ্রকার তেলবাজ চাটুকারদের পাওয়া যায়। কর্তার ইচ্ছায় কর্মই যেমন ওদের ধর্ম। তেলের মাধ্যমে কর্তাকে খুশি করাই এদের প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই তেলবাজদের আধিক্য অত্যাধিক দেখা যায়। এরা নিজের সামান্যতম লাভে সম্প্রদায়ের বৃহত্তর ক্ষতি করতেও পিছপা হয় না। কারণ এদের বিবেক বন্ধক রাখা, তাই তারা বিবেকের বানীর আহ্বান শুনতে পান না। এরা হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দির কমিটির সাথে যুক্ত হয়ে, সেই কমিটিকে তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করেন। এরা ধর্মীয় সংগঠনের সাথে যুক্তের সাথে সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত। তাই তাদের লক্ষ্যই থাকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের খুশি করা। ভোঁদরের মত নিজের মুখের গ্রাস মনিবের কাছে সমর্পণ করা। মনিব খুশি হয়ে যদি কিছু দেয়, তবে তার উদরপূর্তি হতে পারে, নচেৎ নয়। এই তেলবাজ ভোঁদড়েরা সংখ্যাগরিষ্ঠের সাথে অত্যন্ত তেলবাজি চাটুকারিতা করলেও, স্বজাতির সাথে যথাসম্ভব ভোঁদড় নাচন নাচে। এই ভোঁদড় নাচনেওয়ালাদের নিয়ে বাংলায় একটি শিশুতোষ ছড়াও রয়েছে। ছড়াটি ব্যাপক জনপ্রিয়। এই ছড়াটি শিশুকালে বহুবার পড়েছি। কিন্তু তখন সেই ছড়াটির মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারিনি বা কেউ সে রকম ছড়াটির মর্মার্থ বুঝিয়ে দেয়নি। আজ কিছুটা বুঝতে পারি ছড়াটির সুগভীর তাৎপর্য। ছড়াটিকে বলা হয়েছে, বোয়াল মাছেরা, অর্থাৎ ক্ষমতার রাঘব বোয়ালেরা সকল ক্ষমতা নিজের কাছে রেখেছে। আর এই ক্ষমতাবান রাঘববোয়ালদের ক্ষমতার উপভোগ দেখে বোকা ভোঁদড় নেচে বেড়াচ্ছে। আর এই বোকা ভোঁদড়ের নৃত্য দেখে খুকুমণিও হাতেতালি দিয়ে নাচছে। "আয়রে আয় টিয়ে নায়ে ভর দিয়ে। না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে তাই না দেখে ভোঁদর নাচে। ওরে ভোঁদর ফিরে চা খুকুর নাচন দেখে যা।" বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় নেতৃবৃন্দ যদি সত্যি সত্যি সম্প্রদায়ের মানুষের কল্যাণ চিন্তা করে, তবে তাদের ভোঁদরের স্বভাব পরিত্যাগ করে স্বাধীন ভাবে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আজ না হোক, একদিন না একদিন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ সুরক্ষিত হবে। শুধু উপর তলার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে নিজের বিবেকের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। নিজের বিবেক এবং স্বাধীন বিচারবুদ্ধি যা বলবে, সে অনুসারে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই সমাধান সন্নিকটে আসবে।নেতাকে তেল দিয়ে জাতে উঠার প্রবণতা সকলের মধ্যেই আছে। কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আরও যদি নির্দিষ্ট করে বলি, তবে বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশি দেখা যায়। সংখ্যালঘুদের যেহেতু সুযোগ সুবিধা কম। কিন্তু সেই সুযোগ সুবিধা নেয়ার লোকের অন্ত নেই। তাই সর্বদাই একশ্রেণীর স্বার্থপর তেলবাজদের দেখা পাওয়া যায়। যে ব্যক্তিরা নিজের পাঁচটাকা লাভের জন্যে সম্প্রদায়ের পাঁচকোটি টাকার ক্ষতি করতেও দ্বিধাবোধ করে না। দেশের রাজনীতিতে ধর্ম যতই প্রকট হচ্ছে, ততই হিন্দু সম্প্রদায় রাজনৈতিক ক্ষমতাহীন হয়ে যাচ্ছে। তাই ক্ষমতায় টিকে থাকতে অনেকের প্রধানতম অবলম্বন হয়ে পড়ছে তেলবাজি। যোগ্যতা নেই, কিন্তু নেতা হওয়ার অথবা বিভিন্ন সুবিধাভোগী হওয়ার তীব্র বাসনা থেকে অযোগ্য, অপদার্থ ব্যক্তিগণ তেলকে হাতিয়ার করছে। তাদের কাজ, যে কোন মূল্যে নেতাকে খুশি করা। বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ইদানীং বিষয় বেশ দেখা যাচ্ছে, তা হলো জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের মন্দিরগুলোকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের করায়ত্ব করা। সম্মুখভাগ অথবা পশ্চাদ্ভাগ, যে কোন ভাবে স্থানীয় মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা চেয়ারম্যানসহ বিবিধ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন মন্দির কমিটিগুলোতে নিজস্ব ব্যক্তিদের বসিয়ে দিচ্ছে। সেই নিজস্ব ব্যক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো, নেতার সর্বদা মোসাহেবি করে তেলবাজী করা। সেই তেলবাজ ব্যক্তিরা ক্ষমতাবানদের উচ্ছিষ্টভোগী হয়ে মন্দিরকে স্থানীয় নেতার অফিসে পরিণত করে দিচ্ছে। মন্দিরের অফিসে স্থানীয় নেতা বা তাদের বাপ-দাদার ছবি টাঙিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের ভয়ে সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হয়ত, বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। কিন্তু মনে মনে সকলেই বিষয়টিকে ঘৃণা করে। এই কর্মে হয়ত সেই তেলবাজ ব্যক্তিটির ব্যক্তিগত লাভ হচ্ছে। কিন্তু দিনশেষে সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছুদিন আগে একটি বিষয় দেখে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। দেশের একটি বিভাগীয় শহরের শ্মশানঅফিসে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছবি টানানো রয়েছে। অন্য ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও সেই রাজনৈতিক নেতার ছবি শুধু নয়, শ্মশানঅফিসে তার বাবা, তার বাবার বাবা দাদার ছবি টানানো রয়েছে। অথচ সেই বিখ্যাত শ্মশানে অসংখ্য দেশবরেণ্য ব্যক্তিদের অন্তেষ্টিক্রিয়া করা হয়েছে। শ্মশানের অফিসে সেই ব্যক্তিদের ছবি শোভা পেতে পারতো। তবে উত্তর প্রজন্মও তাদের অবদান জানতে পারত।শ্মশানের অধিশ্বরী কালীর একটি ছবি থাকা উচিত ছিলো, যা নেই। শ্মশানের অধিশ্বর ভূতনাথ শিবের একটি ছবি থাকতে পারতো, তা নেই। আছে শুধুই অন্য ধর্মাবলম্বী রাজনৈতিক নেতার তিন প্রজন্মের ছবি। এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ দেয়া যায়। সম্প্রদায়ের হীন তেলবাজরা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, মন্দিরে বসে সম্প্রদায়ের কল্যাণের কোন বিষয় নিয়ে কথা বললে, তা রেকর্ড হয়ে বা ডকুমেন্টেশন হয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার কাছে নিমেষেই পৌঁছে যায়। আমার এ লেখাটিও হয়ত, তেলবাজদের কল্যাণে শ্মশানের অফিসে তিন প্রজন্মের ছবি বসানো অন্য ধর্মাবলম্বী রাজনৈতিক নেতার কাছে পৌঁছে যাবে। এতে তার বিবেক জাগ্রত হলে, তিনি শ্মশানের অফিসে তার পারিবারিক ছবিগুলো সরিয়ে ফেলতে পারেন।অথবা বিষয়টি তিনি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে, তার তেলবাজদের অনুসারীদের দিয়ে নতুন কোন ইস্যু তৈরি করতে পারেন। দুটোই হতে পারে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের সম্প্রদায়ের সম্প্রদায়গত গোপনীয়তা বলতে কিছুই নেই। কিছু স্বার্থপর আত্মঘাতী তেলবাজ ভোঁদড়দের অকল্যাণে।  কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী  সহকারী অধ্যাপক,  সংস্কৃত বিভাগ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ভারতীয় উপমহাদেশে ভোঁদড় বা উদবিড়াল নদী খালসহ বিভিন্ন জলাশয়ে দেখা যায়। তারা মূলত মসৃন ত্বকের মৎস্যভোজী মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণী। বর্তমানে এ ভোঁদড়দের সংখ্যা দিনেদিনেই কমে যাচ্ছে। মাছই এদের অত্যন্ত প্রিয় এবং প্রধান খাদ্য। সর্বদা জলাশয়ে এরা মাছ খুঁজে বেড়ায়। অনেক জেলে মাছ ধরার জন্য ভোঁদড়দের পোষ মানায়। হ্রদ ও নদীর তীর, বড় পুকুর, খাল, প্লাবনভূমি, খাড়ি ও মোহনার কিনারে ভোঁদড়েরা থাকে। এরা জোড়ায় জোড়ায় মিলে মাছ ধরে বেড়ায়।জলে এরা মাছ তেমন একটা খায় না। এদের এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে জেলেরা তাদের দিয়ে মাছ শিকার করে। ভোঁদড়দের গলায় দড়ি বেধে জলে ফেলে একজনকে দিয়ে মাছের দলকে তাড়িয়ে,অন্য জনকে দিয়ে মাছ শিকার করায়। পরবর্তীতে নৌকায় কিংবা পাড়ে ফিরে এলে তাদের কয়েকটি মাছ শিকারের পুরষ্কার স্বরূপ খেতে দেয়। ভোঁদড় কিন্তু মাছ খেয়েই বাঁচে, কিন্তু এর পরেও ভোঁদড়ের শিকার করা সিংহভাগ মাছ নিয়ে যায় তার মনিব জেলে। বাংলাদেশ কিছু কিছু অঞ্চল বিশেষ করে বরিশাল, ফরিদপুর, খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ শিকার করে আসছে। একসময় এই ভোঁদড়দের নিয়ে সুন্দরবনের গভীরে মাছ শিকার করতেন জেলেরা। এখনো করা হয়। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে ভোঁদরের সংখ্যা এমন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে যে, আগামী দুইদশকের মধ্যে হয়ত ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করা একপ্রকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলা চলে।
ভোঁদড়েরা যেমন নিজের মুখের গ্রাস নিজে না খেয়ে প্রভুকে খুশী করতে প্রভুর কাছে তুলে দেয়। তেমনি সকল জাতি এবং সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে একপ্রকার তেলবাজ চাটুকারদের পাওয়া যায়। কর্তার ইচ্ছায় কর্মই যেমন ওদের ধর্ম। তেলের মাধ্যমে কর্তাকে খুশি করাই এদের প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই তেলবাজদের আধিক্য অত্যাধিক দেখা যায়। এরা নিজের সামান্যতম লাভে সম্প্রদায়ের বৃহত্তর ক্ষতি করতেও পিছপা হয় না। কারণ এদের বিবেক বন্ধক রাখা, তাই তারা বিবেকের বানীর আহ্বান শুনতে পান না। এরা হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দির কমিটির সাথে যুক্ত হয়ে, সেই কমিটিকে তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করেন। এরা ধর্মীয় সংগঠনের সাথে যুক্তের সাথে সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত। তাই তাদের লক্ষ্যই থাকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের খুশি করা। ভোঁদরের মত নিজের মুখের গ্রাস মনিবের কাছে সমর্পণ করা। মনিব খুশি হয়ে যদি কিছু দেয়, তবে তার উদরপূর্তি হতে পারে, নচেৎ নয়। এই তেলবাজ ভোঁদড়েরা সংখ্যাগরিষ্ঠের সাথে অত্যন্ত তেলবাজি চাটুকারিতা করলেও, স্বজাতির সাথে যথাসম্ভব ভোঁদড় নাচন নাচে। এই ভোঁদড় নাচনেওয়ালাদের নিয়ে বাংলায় একটি শিশুতোষ ছড়াও রয়েছে। ছড়াটি ব্যাপক জনপ্রিয়। এই ছড়াটি শিশুকালে বহুবার পড়েছি। কিন্তু তখন সেই ছড়াটির মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারিনি বা কেউ সে রকম ছড়াটির মর্মার্থ বুঝিয়ে দেয়নি। আজ কিছুটা বুঝতে পারি ছড়াটির সুগভীর তাৎপর্য। ছড়াটিকে বলা হয়েছে, বোয়াল মাছেরা, অর্থাৎ ক্ষমতার রাঘব বোয়ালেরা সকল ক্ষমতা নিজের কাছে রেখেছে। আর এই ক্ষমতাবান রাঘববোয়ালদের ক্ষমতার উপভোগ দেখে বোকা ভোঁদড় নেচে বেড়াচ্ছে। আর এই বোকা ভোঁদড়ের নৃত্য দেখে খুকুমণিও হাতেতালি দিয়ে নাচছে।
"আয়রে আয় টিয়ে
নায়ে ভর দিয়ে।
না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে
তাই না দেখে ভোঁদর নাচে।
ওরে ভোঁদর ফিরে চা
খুকুর নাচন দেখে যা।"
বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় নেতৃবৃন্দ যদি সত্যি সত্যি সম্প্রদায়ের মানুষের কল্যাণ চিন্তা করে, তবে তাদের ভোঁদরের স্বভাব পরিত্যাগ করে স্বাধীন ভাবে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আজ না হোক, একদিন না একদিন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ সুরক্ষিত হবে। শুধু উপর তলার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে নিজের বিবেকের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। নিজের বিবেক এবং স্বাধীন বিচারবুদ্ধি যা বলবে, সে অনুসারে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই সমাধান সন্নিকটে আসবে।নেতাকে তেল দিয়ে জাতে উঠার প্রবণতা সকলের মধ্যেই আছে। কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আরও যদি নির্দিষ্ট করে বলি, তবে বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশি দেখা যায়। সংখ্যালঘুদের যেহেতু সুযোগ সুবিধা কম। কিন্তু সেই সুযোগ সুবিধা নেয়ার লোকের অন্ত নেই। তাই সর্বদাই একশ্রেণীর স্বার্থপর তেলবাজদের দেখা পাওয়া যায়। যে ব্যক্তিরা নিজের পাঁচটাকা লাভের জন্যে সম্প্রদায়ের পাঁচকোটি টাকার ক্ষতি করতেও দ্বিধাবোধ করে না। দেশের রাজনীতিতে ধর্ম যতই প্রকট হচ্ছে, ততই হিন্দু সম্প্রদায় রাজনৈতিক ক্ষমতাহীন হয়ে যাচ্ছে। তাই ক্ষমতায় টিকে থাকতে অনেকের প্রধানতম অবলম্বন হয়ে পড়ছে তেলবাজি। যোগ্যতা নেই, কিন্তু নেতা হওয়ার অথবা বিভিন্ন সুবিধাভোগী হওয়ার তীব্র বাসনা থেকে অযোগ্য, অপদার্থ ব্যক্তিগণ তেলকে হাতিয়ার করছে। তাদের কাজ, যে কোন মূল্যে নেতাকে খুশি করা। বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ইদানীং বিষয় বেশ দেখা যাচ্ছে, তা হলো জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের মন্দিরগুলোকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের করায়ত্ব করা। সম্মুখভাগ অথবা পশ্চাদ্ভাগ, যে কোন ভাবে স্থানীয় মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা চেয়ারম্যানসহ বিবিধ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন মন্দির কমিটিগুলোতে নিজস্ব ব্যক্তিদের বসিয়ে দিচ্ছে। সেই নিজস্ব ব্যক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো, নেতার সর্বদা মোসাহেবি করে তেলবাজী করা। সেই তেলবাজ ব্যক্তিরা ক্ষমতাবানদের উচ্ছিষ্টভোগী হয়ে মন্দিরকে স্থানীয় নেতার অফিসে পরিণত করে দিচ্ছে। মন্দিরের অফিসে স্থানীয় নেতা বা তাদের বাপ-দাদার ছবি টাঙিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের ভয়ে সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হয়ত, বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। কিন্তু মনে মনে সকলেই বিষয়টিকে ঘৃণা করে। এই কর্মে হয়ত সেই তেলবাজ ব্যক্তিটির ব্যক্তিগত লাভ হচ্ছে। কিন্তু দিনশেষে সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছুদিন আগে একটি বিষয় দেখে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। দেশের একটি বিভাগীয় শহরের শ্মশানঅফিসে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছবি টানানো রয়েছে। অন্য ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও সেই রাজনৈতিক নেতার ছবি শুধু নয়, শ্মশানঅফিসে তার বাবা, তার বাবার বাবা দাদার ছবি টানানো রয়েছে। অথচ সেই বিখ্যাত শ্মশানে অসংখ্য দেশবরেণ্য ব্যক্তিদের অন্তেষ্টিক্রিয়া করা হয়েছে। শ্মশানের অফিসে সেই ব্যক্তিদের ছবি শোভা পেতে পারতো। তবে উত্তর প্রজন্মও তাদের অবদান জানতে পারত।শ্মশানের অধিশ্বরী কালীর একটি ছবি থাকা উচিত ছিলো, যা নেই। শ্মশানের অধিশ্বর ভূতনাথ শিবের একটি ছবি থাকতে পারতো, তা নেই। আছে শুধুই অন্য ধর্মাবলম্বী রাজনৈতিক নেতার তিন প্রজন্মের ছবি। এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ দেয়া যায়। সম্প্রদায়ের হীন তেলবাজরা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, মন্দিরে বসে সম্প্রদায়ের কল্যাণের কোন বিষয় নিয়ে কথা বললে, তা রেকর্ড হয়ে বা ডকুমেন্টেশন হয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার কাছে নিমেষেই পৌঁছে যায়। আমার এ লেখাটিও হয়ত, তেলবাজদের কল্যাণে শ্মশানের অফিসে তিন প্রজন্মের ছবি বসানো অন্য ধর্মাবলম্বী রাজনৈতিক নেতার কাছে পৌঁছে যাবে। এতে তার বিবেক জাগ্রত হলে, তিনি শ্মশানের অফিসে তার পারিবারিক ছবিগুলো সরিয়ে ফেলতে পারেন।অথবা বিষয়টি তিনি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে, তার তেলবাজদের অনুসারীদের দিয়ে নতুন কোন ইস্যু তৈরি করতে পারেন। দুটোই হতে পারে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের সম্প্রদায়ের সম্প্রদায়গত গোপনীয়তা বলতে কিছুই নেই। কিছু স্বার্থপর আত্মঘাতী তেলবাজ ভোঁদড়দের অকল্যাণে।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁