ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

তত্ত্বে ও লোকগাথায়, বাঙালির দুর্গাপূজা ।

বাঙালির দুর্গাপূজা 

মনে আছে ছোট বেলায় বিস্ময় জেগেছিল ,
তোমার এই অপরূপ দশহাতের প্রকাশ দেখে।
দিদাকে বলেছিলাম, দিদা এ কে?
দু'পাশেই বা কারা?
দিদার উত্তরের ভাণ্ডার থেকে সরল কন্ঠস্থ উত্তর
"এই হইলো ভগবতী ঠাইরেন, দুই পাশে তার দুই মাইয়্যা লক্ষী আর শরোশোতি, দুই পোলা কাত্তিক আর ঐযে শুরআলা গণেশ; পাশে ঘোমটা দেওয়া কলাবউ
গণেশ খাইয়্যা ফেলাবে বইল্যা কাত্তিকের পাশে।"
দিদা অনেক দূরে আছ তুমি,
কিন্তু তোমার সেই সারল্যমাখা কথাগুলো
এখনো অনুরণিত হয় হৃদয়ে।
আজও যখন বইপড়ার ছলে
কিছু জানার চেষ্টা করছি,
তোমার ভগবতী ঠাইরেনকে পাচ্ছি
কিন্তু তাঁর মেয়েদেরকে তো কোথাও পাচ্ছিনা!
একই শক্তির শুধু বিভিন্নরূপের প্রকাশ চারিদিকে
নিরাকারকে সাকারে বাধার ভক্তচেষ্টা।
সরস্বতী-লক্ষ্মী-কালী এ ত্রিধা মূর্তি পরিব্যাপ্ত,
সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ গুণপ্রতিভূ হয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে।
অণুতে পরমাণুতে সর্বত্রই চলছে সেই
চিন্ময় শক্তির নিয়ত প্রকাশের খেলা।
সৃষ্টির আনন্দ, স্থিতির অভিভাবকত্ব ;
ধ্বংসের মুক্তির প্রশান্তি সর্বত্রই সেই কারণময়ী।
তিনি অনন্তরূপী,তাঁর কোন প্রাকৃত মূর্তি নেই,
সন্তানের শুদ্ধমানসলোকই তাঁর মূর্ত্তির উৎস।
সর্বত্রই সেই একেরই খেলা,
বহু কেবল আমাদের বুদ্ধির কলুষতার।
মা নিরাকারা অনন্তশক্তি। কার্ত্তিক আর গণেশ?
সে তো মায়ের ক্ষাত্রশক্তি, গণশক্তির প্রকাশ মাত্র।
কলাবউ? বাঙালি সৃষ্টিশীল হৃদয়ের প্রকাশ।
ধর্ম তার রূপান্তরে জাতির পূর্ণতার পথে চলছে।
কলা, ধান, হলুদ,কচু, বেল অবয়বে কলাবউ
শৈলপুত্রী,ব্রহ্মচারিণী,চন্দ্রঘন্টা, কুষ্মাণ্ডা আদি
দুর্গার নয়রূপ নবদুর্গা, বাঙালির নয় খাদ্যশষ্য ;
এ যেন মহাবারিধি মহাগগনের এক অমৃতময় মিলন।
তবে কি দিদা তুমি ভুল বলতে?
প্রকৃতি নিস্তব্ধ। বাতাস বয়ে যাচ্ছে ছন্নছাড়ার মত ঝিঝির মুখরতায় চারিদিকে শব্দময় মৌনতার গন্ধ,
দশমী চাঁদ ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে,
কিসের এক ঔৎসুক্য নিয়ে।
কোথা থেকে যেন এক কন্ঠস্বর বলে উঠল,
"শোন, তত্ত্বই কি সবকিছু?
তত্ত্বই বাইরে ,লোকবিশ্বাস-গাথা কিছুই না?"
হাজার বছরের জ্ঞানের আলোক নিয়ে
দু'টি বাক্য হাজির হল!
মনে জাগলো, নতুন উপলব্ধির এক অহনাকাল।
তত্ত্ব শুধু তত্ত্ব হয়েই থাকে উপরতলায় পুঁথির গ্রন্থিতে
সাধারণজন খোঁজে না তাঁকে । তাদের চাই আনন্দ
রসাস্বাদনের ছলে অবকাশ।
ভারি কথা তাদের নিমতুল্য।
তত্ত্ব ,লোকগাথা দুটোই বড় দরকারি সত্যি।
তত্ত্বে আনে জ্ঞান,
লোকগাথা, লোকবিশ্বাসে আছে আনন্দ ;
জ্ঞান ও আনন্দের মিলনেই শাশ্বত ধর্ম
এগিয়ে চলছে মহাকালের পথে
কাল থেকে কালান্তরে।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁