ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

তুমি কে? আমি কে? বাঙালি! বাঙালি!

২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির সেই উত্তাল শাহবাগের গণজাগরণের দিনগুলি কথা যতদিন আমরা বেঁচে আছি, ততদিনই মনে থাকবে।আমরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন দেখিনি, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান দেখিনি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি; কিন্তু ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শাহবাগ আন্দোলন বা শাহবাগ গণ-অবরোধ দেখেছি।দেখেছি দেশের এক বিরাট সংখ্যক মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে৷   ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামী আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণা করে । কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা, আলুব্দি গ্রামে ৩৪৪ জন মানুষ হত্যা সহ মোট ৬টি অপরাধের ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু এত হত্যা, ধর্ষণ, সর্বোপরী গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মেনে নিতে পারেনি। তাই এ রায় নিয়ে তীব্রতর প্রতিক্রিয়া প্রতিক্রিয়া শুরু হয় সারা দেশব্যাপী। সেই প্রতিক্রিয়ায় অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী সহ বিপুল সংখ্যক মানুষ শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে। পরবর্তীতে এ আন্দোলনটি চট্টগ্রাম সহ সকল বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পরে। ১৯৭১ এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের রাজাকার এবং দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ এবং তীব্র ঘৃণা প্রকাশিত হয় প্রত্যেকটি সমাবেশ থেকে।  ১৯৭১ সালের অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনাকে ধারণ করে ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ গণ-আন্দোলনের দিনগুলি আর হয়ত আমাদের জীবদ্দশায় ফিরে আসবে না। কিন্তু যারা সেই দিনগুলোতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল, তারা কোনদিন সেই আন্দোলনের স্মৃতি ভুলতে পারবে না। শাহবাগে লাখো মানুষের মাঝে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সুবিশাল ছবিটি এখনো চোখে ভাসে। সেই লক্ষ লক্ষ মোমের আলো, লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ; উজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে স্মৃতিতে। আন্দোলনে প্রধান যে দু'টি শ্লোগান উচ্চারিত হয়েছিল, তা হল: "তুমি কে? আমি কে?  বাঙালি! বাঙালি! তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।" অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে দেশের ভৌগোলিক পরিচয়টি আন্দোলনে বারেবারেই পরিস্ফুটিত হয়ে উঠে। সাথেসাথে পরাজিত পাকিস্তানি শক্তি এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশিত হয় বিভিন্ন শ্লোগানে।  "পাকিস্তানি প্রেতাত্মা, পাকিস্তানে ফেরৎ যা! ক-তে কাদের মোল্লা,  তুই রাজাকার! তুই রাজাকার! লাখো শহীদের বাংলায়  রাজাকারের ঠাঁই নাই! একাত্তরের হাতিয়ার,  গর্জে উঠুক আরেকবার। রাজাকার নিপাত যাক, শহীদের আত্মা শান্তি পাক।" শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মই নেতৃত্ব দেয় আন্দোলনটিকে। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শাহবাগ।পরবর্তীতে শাহবাগ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, কুমিল্লা, রংপুর প্রভৃতি শহরে ছড়িয়ে পরে। গণজাগরণ সমাবেশের এ আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংসদ, মন্ত্রী, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতি জগতের বিভিন্ন তারকারা সহ সর্বস্তরের মানুষ সংহতি প্রকাশ করে।সদ্য নতুন শিক্ষক হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে আমরাও অংশগ্রহণ করি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনের গণজাগরণ সমাবেশে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব, অভাবনীয় মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্পন্দন তৈরি হয়। আমার এক ছাত্র পরীক্ষা অসমাপ্ত রেখেই পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে অনশনে অংশগ্রহণ করে। আমি অবশ্য তখন তাকে এই পরীক্ষা রেখে অনশনের জন্যে বেশ বকাবকি করেছিলাম। এমনি বাঁধভাঙা জোয়ার এনে দিয়েছিল আন্দোলনটি। দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া, বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে, রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে দেশের আপামরসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল সেদিন। কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী  সহকারী অধ্যাপক,  সংস্কৃত বিভাগ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির সেই উত্তাল শাহবাগের গণজাগরণের দিনগুলি কথা যতদিন আমরা বেঁচে আছি, ততদিনই মনে থাকবে।আমরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন দেখিনি, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান দেখিনি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি; কিন্তু ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শাহবাগ আন্দোলন বা শাহবাগ গণ-অবরোধ দেখেছি।দেখেছি দেশের এক বিরাট সংখ্যক মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে৷

৫ ফেব্রুয়ারি সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামী আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণা করে । কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা, আলুব্দি গ্রামে ৩৪৪ জন মানুষ হত্যা সহ মোট ৬টি অপরাধের ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু এত হত্যা, ধর্ষণ, সর্বোপরী গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মেনে নিতে পারেনি। তাই এ রায় নিয়ে তীব্রতর প্রতিক্রিয়া প্রতিক্রিয়া শুরু হয় সারা দেশব্যাপী। সেই প্রতিক্রিয়ায় অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী সহ বিপুল সংখ্যক মানুষ শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে। পরবর্তীতে এ আন্দোলনটি চট্টগ্রাম সহ সকল বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পরে। ১৯৭১ এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের রাজাকার এবং দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ এবং তীব্র ঘৃণা প্রকাশিত হয় প্রত্যেকটি সমাবেশ থেকে।
১৯৭১ সালের অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনাকে ধারণ করে ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ গণ-আন্দোলনের দিনগুলি আর হয়ত আমাদের জীবদ্দশায় ফিরে আসবে না। কিন্তু যারা সেই দিনগুলোতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল, তারা কোনদিন সেই আন্দোলনের স্মৃতি ভুলতে পারবে না। শাহবাগে লাখো মানুষের মাঝে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সুবিশাল ছবিটি এখনো চোখে ভাসে। সেই লক্ষ লক্ষ মোমের আলো, লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ; উজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে স্মৃতিতে। আন্দোলনে প্রধান যে দু'টি শ্লোগান উচ্চারিত হয়েছিল, তা হল:
"তুমি কে? আমি কে?
বাঙালি! বাঙালি!
তোমার আমার ঠিকানা,
পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।"
অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে দেশের ভৌগোলিক পরিচয়টি আন্দোলনে বারেবারেই পরিস্ফুটিত হয়ে উঠে। সাথেসাথে পরাজিত পাকিস্তানি শক্তি এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশিত হয় বিভিন্ন শ্লোগানে।
"পাকিস্তানি প্রেতাত্মা,
পাকিস্তানে ফেরৎ যা!
ক-তে কাদের মোল্লা,
তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!
লাখো শহীদের বাংলায়
রাজাকারের ঠাঁই নাই!
একাত্তরের হাতিয়ার,
গর্জে উঠুক আরেকবার।
রাজাকার নিপাত যাক,
শহীদের আত্মা শান্তি পাক।"
শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মই নেতৃত্ব দেয় আন্দোলনটিকে। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শাহবাগ।পরবর্তীতে শাহবাগ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, কুমিল্লা, রংপুর প্রভৃতি শহরে ছড়িয়ে পরে। গণজাগরণ সমাবেশের এ আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংসদ, মন্ত্রী, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতি জগতের বিভিন্ন তারকারা সহ সর্বস্তরের মানুষ সংহতি প্রকাশ করে।সদ্য নতুন শিক্ষক হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে আমরাও অংশগ্রহণ করি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনের গণজাগরণ সমাবেশে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব, অভাবনীয় মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্পন্দন তৈরি হয়। আমার এক ছাত্র পরীক্ষা অসমাপ্ত রেখেই পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে অনশনে অংশগ্রহণ করে। আমি অবশ্য তখন তাকে এই পরীক্ষা রেখে অনশনের জন্যে বেশ বকাবকি করেছিলাম। এমনি বাঁধভাঙা জোয়ার এনে দিয়েছিল আন্দোলনটি। দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া, বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে, রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে দেশের আপামরসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল সেদিন।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁