ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

আত্মপ্রচার বা 'নার্সিসিজম', হাস্যকর এবং বন্ধুহীন করে।


আত্মপ্রচার বা 'নার্সিসিজম',  হাস্যকর এবং বন্ধুহীন করে।

অধিকাংশ মানুষই স্বনির্মিত শৃঙ্খলে আবদ্ধ। এই স্বনির্মিত শৃঙ্খলের মধ্যে বর্তমানকালে অন্যতম একটি শৃঙ্খল হল 'নার্সিসিজম’। একে বাংলায় ‘আত্মপ্রেম’ বা 'আত্মকেন্দ্রিকতা’ নামেও অবিহিত করা হয়। পশ্চিমা গ্রিকপুরাণে নার্সিসিজমের পৌরাণিক ঘটনাটি রয়েছে। নার্সিসাস নামে বিওশিয়ার থেসপি শহরের একজন অত্যন্ত সুদর্শন যুবক ছিল। তিনি খ্যাতিমান ছিলেন শিকারী এবং জন্মগতভাবে অনুপম সৌন্দর্যমণ্ডিত সুঠাম দেহের অধিকারী। গ্রিক পুরাণ কাহিনী অনুসারে নার্সিসাসের মাতা ছিলেন জলপরী লিরিওপি এবং পিতা ছিলেন নদীর দেবতা সেফিসাস। নার্সিসাস তার নিজ সৌন্দর্যে প্রচণ্ড গর্বিত ছিল। যে সকল নারী তার প্রেমে পড়ত তাদেরকে সে প্রত্যাখ্যান করে দিত। সবার প্রেমকেই প্রত্যাখ্যান করায় ন্যায়পরায়ন ক্রোধের দেবী নেমেসিস তাঁকে একদিন অভিশাপ দিলেন। দেবী বললেন,"নার্সিসাস, তুমি এমন একজনের প্রেমে পড়বে যাকে তুমি শুধু দূর থেকেই দেখতে পারবে। কখনও তাকে কাছে পাবে না। এমনকি স্পর্শও করতে পারবে না।" অভিশাপের ধারাবাহিকতায় ক্ষুব্ধ দেবী নেমেসিস নার্সিসাসকে একটি হ্রদের দিকে আকৃষ্ট করে। দেবীর অদৃশ্য আকর্ষণে নার্সিসাসও হ্রদের পাড়ে চলে আসে।

সেসময়ে আয়নার প্রচলন না থাকায় নার্সিসাস নিজের অপরূপ সৌন্দর্য্যময় দেহসৌষ্ঠব নিজের চোখে কখনো দেখেননি। শুধু অন্যের প্রশংসায় জেনেছেন যে, তিনি অত্যন্ত সুন্দর। অন্যের মুখে শুনে শুনে দেহের সৌন্দর্য নিয়ে নার্সিসাসের অহংকারের অন্ত ছিল না। এ অহংকারী মানসিকতাই তাঁর জীবনে এক ভয়ংকর পরিণতি ডেকে নিয়ে আসে ।একদিন বনে হরিণ শিকার করতে করতে অত্যন্ত জলতেষ্টা এবং পথের ক্লান্তিতে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে যায় নার্সিসাস। সে তৃষ্ণা নিবারণের জন্যে জলের আশায় একটি হ্রদের দেখা পায়। হ্রদের জল অত্যন্ত স্বচ্ছ আয়নার মত। নার্সিসাস যখন সেই স্বচ্ছ হ্রদের জল পান করার জন্য ঝুকলেন; তখনি তিনি প্রথমবারের মত নিজের রূপ এবং সৌন্দর্যকে স্পষ্ট দেখতে পেলেন। তিনি হ্রদের জলে প্রতিফলিত নিজের রূপ যৌবন দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। বিস্ময়ে বার বার বলতে লাগলেন, তুমি এত সুন্দর! নার্সিসাস তার জলে নিজের প্রতিবিম্বের প্রেমে নিজেই হাবুডুবু খেতে থাকল। নার্সিসাস নিচু হয়ে হৃদের জলের আত্মপ্রতিবিম্বকে চুম্বন করতে লাগল। বিপরীতে তাএ প্রতিবিম্বও তাকে একইভাবে চুম্বন দিল। নার্সিসাস আরও আত্মপ্রেমে মোহান্ধ হয়ে গেল। এ নার্সিসাস তার প্রতিবিম্বকে জল থেকে টেনে তোলার জন্য হাত বাড়াতে জলে ঢেউতে তার প্রতিবিম্ব এলোমেলো হয়ে গেল। তা দেখে নার্সিসাসও অস্থির হয়ে গেল। হ্রদের জল আবার ধীরেধীরে পুনরায় স্থির হল, নার্সিসাসও জলদেবতার মত অপরূপ সৌন্দর্যময় নিজের দেহকে পুনরায় একাগ্র দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। নিজের সৌন্দর্যের মায়া কাটাতে না-পেরে, নার্সিসাসও একসময় বেঁচে থাকার সম্পূর্ণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। দেহে জলের তৃষ্ণা নিয়ে সে তার প্রতিচ্ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এভাবে ধীরেধীরে সে আত্মপ্রেমের জালে জড়িয়ে মোহান্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। হ্রদের পাড়ে যে স্থানে নার্সিসাস মৃত্যুবরণ করে, সেই মাটিতেই জন্ম নেয় একটি অপূর্ব সুন্দর ফুলের গাছ। গাছটি ‘নার্সিসাস’ নামে খ্যাত হয়। বাংলায় শ্বেতশুভ্র এ ফুলটিকে ‘নার্গিস’ নামে অবিহিত করা হয়। অবশ্য শ্বেতশুভ্র রঙের সাথে সাথে হালকা গোলাপি রঙেরও নার্গিস ফুল দেখা যায়। নার্সিসাসের এই বিরলতম আত্মপ্রেম স্বভাবের দৃষ্টান্ত থেকেই আত্মকেন্দ্রিকতা বোঝাতে বিশ্বব্যাপী একটি শব্দ অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়। সে শব্দটি হল 'নার্সিসিজম' বা 'আত্মপ্রেম'।
অধিকাংশ মানুষই স্বনির্মিত শৃঙ্খলে আবদ্ধ। এই স্বনির্মিত শৃঙ্খলের মধ্যে বর্তমানকালে অন্যতম একটি শৃঙ্খল হল 'নার্সিসিজম’। একে বাংলায় ‘আত্মপ্রেম’ বা 'আত্মকেন্দ্রিকতা’ নামেও অবিহিত করা হয়। পশ্চিমা গ্রিকপুরাণে নার্সিসিজমের পৌরাণিক ঘটনাটি রয়েছে।  নার্সিসাস নামে বিওশিয়ার থেসপি শহরের একজন অত্যন্ত সুদর্শন যুবক ছিল। তিনি খ্যাতিমান ছিলেন শিকারী এবং জন্মগতভাবে অনুপম সৌন্দর্যমণ্ডিত সুঠাম দেহের অধিকারী। গ্রিক পুরাণ কাহিনী অনুসারে নার্সিসাসের মাতা ছিলেন জলপরী লিরিওপি এবং পিতা ছিলেন নদীর দেবতা সেফিসাস। নার্সিসাস তার নিজ সৌন্দর্যে প্রচণ্ড গর্বিত ছিল। যে সকল নারী তার প্রেমে পড়ত তাদেরকে সে প্রত্যাখ্যান করে দিত। সবার প্রেমকেই প্রত্যাখ্যান করায়  ন্যায়পরায়ন ক্রোধের দেবী নেমেসিস তাঁকে একদিন অভিশাপ দিলেন। দেবী বললেন,"নার্সিসাস, তুমি এমন একজনের প্রেমে পড়বে যাকে তুমি শুধু দূর থেকেই দেখতে পারবে। কখনও তাকে কাছে পাবে না। এমনকি স্পর্শও করতে পারবে না।" অভিশাপের ধারাবাহিকতায় ক্ষুব্ধ দেবী নেমেসিস নার্সিসাসকে একটি হ্রদের দিকে আকৃষ্ট করে। দেবীর অদৃশ্য আকর্ষণে নার্সিসাসও হ্রদের পাড়ে চলে আসে।  সেস ময়ে আয়নার প্রচলন না থাকায় নার্সিসাস নিজের অপরূপ সৌন্দর্য্যময় দেহসৌষ্ঠব নিজের চোখে কখনো  দেখেননি। শুধু অন্যের প্রশংসায় জেনেছেন যে, তিনি অত্যন্ত সুন্দর। অন্যের মুখে শুনে শুনে দেহের সৌন্দর্য নিয়ে নার্সিসাসের অহংকারের অন্ত ছিল না। এ অহংকারী মানসিকতাই তাঁর জীবনে এক ভয়ংকর পরিণতি ডেকে নিয়ে আসে ।একদিন বনে হরিণ শিকার করতে করতে অত্যন্ত জলতেষ্টা এবং পথের ক্লান্তিতে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে যায় নার্সিসাস। সে তৃষ্ণা নিবারণের জন্যে জলের আশায় একটি হ্রদের দেখা পায়। হ্রদের জল অত্যন্ত স্বচ্ছ আয়নার মত। নার্সিসাস যখন সেই স্বচ্ছ হ্রদের জল পান করার জন্য ঝুকলেন; তখনি তিনি প্রথমবারের মত নিজের রূপ এবং সৌন্দর্যকে স্পষ্ট দেখতে পেলেন। তিনি হ্রদের জলে প্রতিফলিত নিজের রূপ যৌবন দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। বিস্ময়ে বার বার বলতে লাগলেন, তুমি এত সুন্দর! নার্সিসাস তার জলে নিজের প্রতিবিম্বের প্রেমে নিজেই হাবুডুবু খেতে থাকল। নার্সিসাস নিচু হয়ে হৃদের জলের আত্মপ্রতিবিম্বকে চুম্বন করতে লাগল। বিপরীতে তাএ প্রতিবিম্বও তাকে একইভাবে চুম্বন দিল। নার্সিসাস আরও আত্মপ্রেমে মোহান্ধ হয়ে গেল। এ নার্সিসাস তার প্রতিবিম্বকে জল থেকে টেনে তোলার জন্য হাত বাড়াতে জলে ঢেউতে তার প্রতিবিম্ব এলোমেলো হয়ে গেল। তা দেখে নার্সিসাসও অস্থির হয়ে গেল। হ্রদের জল আবার ধীরেধীরে পুনরায় স্থির হল, নার্সিসাসও জলদেবতার মত অপরূপ সৌন্দর্যময় নিজের দেহকে পুনরায় একাগ্র দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। নিজের সৌন্দর্যের মায়া কাটাতে না-পেরে, নার্সিসাসও একসময় বেঁচে থাকার সম্পূর্ণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। দেহে জলের তৃষ্ণা নিয়ে সে তার প্রতিচ্ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এভাবে ধীরেধীরে সে আত্মপ্রেমের জালে জড়িয়ে মোহান্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। হ্রদের পাড়ে যে স্থানে নার্সিসাস মৃত্যুবরণ করে, সেই মাটিতেই জন্ম নেয় একটি অপূর্ব সুন্দর ফুলের গাছ। গাছটি ‘নার্সিসাস’ নামে খ্যাত হয়। বাংলায় শ্বেতশুভ্র এ ফুলটিকে  ‘নার্গিস’ নামে অবিহিত করা হয়। অবশ্য শ্বেতশুভ্র রঙের সাথে সাথে হালকা গোলাপি রঙেরও নার্গিস ফুল দেখা যায়। নার্সিসাসের এই বিরলতম আত্মপ্রেম স্বভাবের দৃষ্টান্ত থেকেই আত্মকেন্দ্রিকতা বোঝাতে বিশ্বব্যাপী একটি শব্দ অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়। সে শব্দটি হল 'নার্সিসিজম' বা 'আত্মপ্রেম'। এ কথা সত্য যে, আত্মপ্রেমের বিষয়টি সর্বকালেই ছিল আছে এবং থাকবে। পঞ্চপাণ্ডব দ্রৌপদী স্বশরীরে স্বর্গে যেতে হিমালয়ের উত্তরে মহাপ্রস্থানের পথে যাত্রা শুরু করলো।মহাপ্রস্থানের যাত্রী কখনো পিছনে ফিরে যায় না । তাই পঞ্চ পান্ডব ও দ্রোপদি শুধুই এগিয়ে চলিলেন মহাপ্রস্থানের পথে। পথে একটি কুকুরও তাদের অনুসরণ করে চলতে লাগলো। মহাপ্রস্থানের পথে দ্রোপদী প্রথমে স্থবির হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ।দ্রোপদির মৃত্যুর কিছুদিন পরেই মহাপ্রস্থানের পথে সহদেব এবং নকুল এই জমজ ভ্রাতৃওদ্বয় মৃত্যুবরণ করে। তখন অত্যন্ত বেদনাবিধুর হৃদয়ে ভীম যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করে, "দাদা সহদেব অত্যন্ত সুশীল ব্যক্তিত্বের এবং নকুল অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ অধিকারী ছিল, সেই তাদের কেন মৃত্যু হল? তাঁরা দুজনে কেন স্বশরীরে সর্গে যেতে পারলো না?"ভীমের উত্তরে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির বলেন, সহদেব মনে করত, তাঁর মত সুশীল এবং জ্ঞানী জগতে আর দ্বিতীয় নেই; আত্মগর্বই সহদেবের মৃত্যুর কারণ।ভ্রাতা নকুল মনে করত, তাঁর মত সুদর্শন পুরুষ এ আর্যাবর্তে আর দ্বিতীয়টি নেই ; সেই আত্মগর্বের অহংকারই তাঁর মৃত্যুর কারণ। এ  আত্মপ্রশংসা বা আত্মস্তুতি প্রসঙ্গে গরুড়পুরাণের পূর্বখণ্ডে বলা হয়েছে: যত্র মুক্তাদরস্নেহো বিলুপ্তং তত্র সৌহৃদম্ ।  তথ্যে কেবলং শ্লাঘ্যং যত্রাত্মা ক্রিয়তে স্তুতৌ॥ (গরুড়পুরাণ: পূর্বখণ্ড, ১৫.৫৬) " যে ব্যক্তি সর্বদা আত্মশ্লাঘা বা আত্মস্তুতি করে, তাকে আদর, স্নেহ করা উচিত নয়। এমনকি তার সাথে বন্ধুত্বও করা উচিত নয়।" আমাদের আশেপাশে নারীপুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সকলের মাঝেই কমবেশি নার্সিসিজম' বা 'আত্মপ্রেম' রয়েছে। তবে নারীদের মাঝে এ নার্সিসিজম বিষয়টির প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যাদের এই আত্মপ্রেম সীমিত পরিসরে, তাদেরটা হয়ত প্রকাশিত হয় না, কিন্তু যাদের বিষয়টি অধিক সংখ্যক, তাদের বিষয়টা সকলেই জানতে পারে। এ কারণে শ্রীমদ্ভগবদগীতাতে বলা হয়েছে, মানুষের নিজ আত্মাই আত্মার বন্ধু, আত্মাই আত্মার শত্রু। ভগবান নিজ আত্মা দ্বারাই আত্মাকে বিষয়কূপ হতে উদ্ধার হতে বলেছেন।  উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েৎ। আত্মৈব হ্যাত্মনো বন্ধুরাত্মৈব রিপুরাত্মনঃ।। (গীতা:০৬.০৫) "আত্মার দ্বারাই আত্মাকে বিষয়কূপ হতে উদ্ধার করবে, আত্মাকে অধঃপতনের দিকে যেতে দিবে না; কারণ, আত্মাই আত্মার বন্ধু, আত্মাই আত্মার শত্রু।" নিজ আত্মসত্ত্বাকে মুক্তির পথে অগ্রসর না করে, অনেকেই আমরা মোহমত্ত হয়ে মুক্তির বিপরীতে আত্মগর্ব এবং প্রচারে নিয়োজিত করি। ইদানীং আমরা অনেকেই বিড়ালের যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে সিংহের মত হাঁকডাক করে আত্মপ্রচার করে দেই। লক্ষ্য থাকে, অন্যের দৃষ্টি আকর্ষিত করার ; যা একধরণের হাস্যকর নির্বুদ্ধিতার সমতুল্য।বিদ্যাবুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা,  তপস্যা, প্রচুর ধনসম্পত্তি,  সৌন্দর্য, অটুট যৌবন এবং অভিজাত্য এগুলো মানুষের অমূল্য সম্পদ । কিন্তু যারা এই সম্পদগুলোর সম্পূর্ণ বা কয়েকটি পেয়ে প্রচণ্ড আত্মঅহমিকায় অন্ধ হয়ে বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলে, তারা পরিণামে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনে। আত্মপ্রেম, আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে উৎপন্ন আত্মঅহংকারে মানুষ নিজেকে অন্যদের থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করতে শুরু করে। যা একটি পর্যায়ে গিয়ে মানসিক ব্যাধিতেও পরিণত হতে পারে। এর ফলশ্রুতিতে সে অন্যদের থেকে মানসিক এবং সামাজিকভাবে দূরে চলে যেতে থাকে। তাই অপ্রয়োজনীয় আত্মপ্রেম, আত্মকেন্দ্রিকতা এবং আত্মঅহংকার থেকে যথাসম্ভব মুক্ত থাকা উচিত। শ্রীমদ্ভাগবতেও এ বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বলা হয়েছে। বিদ্যাতপােবিত্তবপূর্বয়ঃকুলৈঃ সতাং গুণৈঃ ষড়ভিরসত্তমেতরৈঃ।  স্মৃতৌ হতায়াং ভৃতমানদুর্দশঃ  স্তব্ধা ন পশ্যন্তি হি ধাম ভূয়সাম্৷। (শ্রীমদ্ভাগবত:৪. ৩.১৭) "বিদ্যা, তপস্যা, ধন, সুদৃঢ় শরীর, যুবা-বয়স এবং সদ্বংশ—এই ছয়টি সৎ-পুরুষের পক্ষে গুণ। কিন্তু অসাধুর ক্ষেত্রে এ গুণগুলোই দোষে পরিণত হয়। কারণ এগুলোর দ্বারা তার অহংকার বৃদ্ধি পায়, দৃষ্টি আবিল হয়ে ওঠে এবং বিবেকজ্ঞান নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে উদ্ধতস্বভাব সেই ব্যক্তি মহাপুরুষগণের প্রভাব চোখে দেখতে পায় না।" বর্তমানে সামান্যতম বিষয়ে আমরা অন্যের গায়ে কালিমা লেপন করে, অন্যকে সামাজিকভাবে টেনে নিচে নামিয়ে, অন্যকে সম্মানহানি করে নিজে বড় হতে চাই। যোগ্যতা থাক বা না থাক, এতে কিছুই যায় আসে না; জোরজবরদস্তি করে হলেও শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান পেতে চাই। বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের এবং দুঃখজনক। আত্মপ্রচার মানুষকে বড় করে না; হাস্যকর করে, ছোট করে এবং সর্বোপরি বন্ধুহীন করে। কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী  সহকারী অধ্যাপক,  সংস্কৃত বিভাগ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
এ কথা সত্য যে, আত্মপ্রেমের বিষয়টি সর্বকালেই ছিল আছে এবং থাকবে। পঞ্চপাণ্ডব দ্রৌপদী স্বশরীরে স্বর্গে যেতে হিমালয়ের উত্তরে মহাপ্রস্থানের পথে যাত্রা শুরু করলো।মহাপ্রস্থানের যাত্রী কখনো পিছনে ফিরে যায় না । তাই পঞ্চ পান্ডব ও দ্রোপদি শুধুই এগিয়ে চলিলেন মহাপ্রস্থানের পথে। পথে একটি কুকুরও তাদের অনুসরণ করে চলতে লাগলো। মহাপ্রস্থানের পথে দ্রোপদী প্রথমে স্থবির হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ।দ্রোপদির মৃত্যুর কিছুদিন পরেই মহাপ্রস্থানের পথে সহদেব এবং নকুল এই জমজ ভ্রাতৃওদ্বয় মৃত্যুবরণ করে। তখন অত্যন্ত বেদনাবিধুর হৃদয়ে ভীম যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করে, "দাদা সহদেব অত্যন্ত সুশীল ব্যক্তিত্বের এবং নকুল অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ অধিকারী ছিল, সেই তাদের কেন মৃত্যু হল? তাঁরা দুজনে কেন স্বশরীরে সর্গে যেতে পারলো না?"ভীমের উত্তরে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির বলেন, সহদেব মনে করত, তাঁর মত সুশীল এবং জ্ঞানী জগতে আর দ্বিতীয় নেই; আত্মগর্বই সহদেবের মৃত্যুর কারণ।ভ্রাতা নকুল মনে করত, তাঁর মত সুদর্শন পুরুষ এ আর্যাবর্তে আর দ্বিতীয়টি নেই ; সেই আত্মগর্বের অহংকারই তাঁর মৃত্যুর কারণ। এ আত্মপ্রশংসা বা আত্মস্তুতি প্রসঙ্গে গরুড়পুরাণের পূর্বখণ্ডে বলা হয়েছে:
যত্র মুক্তাদরস্নেহো বিলুপ্তং তত্র সৌহৃদম্ ।
তথ্যে কেবলং শ্লাঘ্যং যত্রাত্মা ক্রিয়তে স্তুতৌ॥
(গরুড়পুরাণ: পূর্বখণ্ড, ১৫.৫৬)
" যে ব্যক্তি সর্বদা আত্মশ্লাঘা বা আত্মস্তুতি করে, তাকে আদর, স্নেহ করা উচিত নয়। এমনকি তার সাথে বন্ধুত্বও করা উচিত নয়।"
আমাদের আশেপাশে নারীপুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সকলের মাঝেই কমবেশি নার্সিসিজম' বা 'আত্মপ্রেম' রয়েছে। তবে নারীদের মাঝে এ নার্সিসিজম বিষয়টির প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যাদের এই আত্মপ্রেম সীমিত পরিসরে, তাদেরটা হয়ত প্রকাশিত হয় না, কিন্তু যাদের বিষয়টি অধিক সংখ্যক, তাদের বিষয়টা সকলেই জানতে পারে। এ কারণে শ্রীমদ্ভগবদগীতাতে বলা হয়েছে, মানুষের নিজ আত্মাই আত্মার বন্ধু, আত্মাই আত্মার শত্রু। ভগবান নিজ আত্মা দ্বারাই আত্মাকে বিষয়কূপ হতে উদ্ধার হতে বলেছেন।
উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েৎ।
আত্মৈব হ্যাত্মনো বন্ধুরাত্মৈব রিপুরাত্মনঃ।।
(গীতা:০৬.০৫)
"আত্মার দ্বারাই আত্মাকে বিষয়কূপ হতে উদ্ধার করবে, আত্মাকে অধঃপতনের দিকে যেতে দিবে না; কারণ, আত্মাই আত্মার বন্ধু, আত্মাই আত্মার শত্রু।"
নিজ আত্মসত্ত্বাকে মুক্তির পথে অগ্রসর না করে, অনেকেই আমরা মোহমত্ত হয়ে মুক্তির বিপরীতে আত্মগর্ব এবং প্রচারে নিয়োজিত করি। ইদানীং আমরা অনেকেই বিড়ালের যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে সিংহের মত হাঁকডাক করে আত্মপ্রচার করে দেই। লক্ষ্য থাকে, অন্যের দৃষ্টি আকর্ষিত করার ; যা একধরণের হাস্যকর নির্বুদ্ধিতার সমতুল্য।বিদ্যাবুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা, তপস্যা, প্রচুর ধনসম্পত্তি, সৌন্দর্য, অটুট যৌবন এবং অভিজাত্য এগুলো মানুষের অমূল্য সম্পদ । কিন্তু যারা এই সম্পদগুলোর সম্পূর্ণ বা কয়েকটি পেয়ে প্রচণ্ড আত্মঅহমিকায় অন্ধ হয়ে বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলে, তারা পরিণামে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনে। আত্মপ্রেম, আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে উৎপন্ন আত্মঅহংকারে মানুষ নিজেকে অন্যদের থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করতে শুরু করে। যা একটি পর্যায়ে গিয়ে মানসিক ব্যাধিতেও পরিণত হতে পারে। এর ফলশ্রুতিতে সে অন্যদের থেকে মানসিক এবং সামাজিকভাবে দূরে চলে যেতে থাকে। তাই অপ্রয়োজনীয় আত্মপ্রেম, আত্মকেন্দ্রিকতা এবং আত্মঅহংকার থেকে যথাসম্ভব মুক্ত থাকা উচিত। শ্রীমদ্ভাগবতেও এ বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বলা হয়েছে।
বিদ্যাতপােবিত্তবপূর্বয়ঃকুলৈঃ
সতাং গুণৈঃ ষড়ভিরসত্তমেতরৈঃ।
স্মৃতৌ হতায়াং ভৃতমানদুর্দশঃ
স্তব্ধা ন পশ্যন্তি হি ধাম ভূয়সাম্৷।
(শ্রীমদ্ভাগবত:৪. ৩.১৭)
"বিদ্যা, তপস্যা, ধন, সুদৃঢ় শরীর, যুবা-বয়স এবং সদ্বংশ—এই ছয়টি সৎ-পুরুষের পক্ষে গুণ। কিন্তু অসাধুর ক্ষেত্রে এ গুণগুলোই দোষে পরিণত হয়। কারণ এগুলোর দ্বারা তার অহংকার বৃদ্ধি পায়, দৃষ্টি আবিল হয়ে ওঠে এবং বিবেকজ্ঞান নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে উদ্ধতস্বভাব সেই ব্যক্তি মহাপুরুষগণের প্রভাব চোখে দেখতে পায় না।"
বর্তমানে সামান্যতম বিষয়ে আমরা অন্যের গায়ে কালিমা লেপন করে, অন্যকে সামাজিকভাবে টেনে নিচে নামিয়ে, অন্যকে সম্মানহানি করে নিজে বড় হতে চাই। যোগ্যতা থাক বা না থাক, এতে কিছুই যায় আসে না; জোরজবরদস্তি করে হলেও শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান পেতে চাই। বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের এবং দুঃখজনক। আত্মপ্রচার মানুষকে বড় করে না; হাস্যকর করে, ছোট করে এবং সর্বোপরি বন্ধুহীন করে।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।

মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁