Friday, 9 July 2021
রঙিন ভালোবাসাকে নিয়ে, অগোছালো কিছু পঙক্তিমালা
১.
আজি দখিনদুয়ার খোলা
খুব একটা ভাল নই,
একথা আমি জানি;
ভাল-মন্দ মিশ্রিত রক্ত মাংসের
সচল একটি পিণ্ড আমি।
জীবনে অনেক ভাল হতে চেয়েছিলাম
প্রচণ্ড ভালোবাসা পেতে চেয়েছিলাম,
দিগন্তবিস্তৃত ভালোবাসতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু সত্যি বলতে কি,
যে যোগ্যতা প্রয়োজন ভালোবাসতে
তা হয়ত আমার সাধ্যে নেই,
ভাগ্যেও নেই।
তবুও আজি,
দখিনদুয়ার খুলে দিলাম
তোমার প্রতিক্ষায়;
ওগো প্রাণময় বন্ধু আমার,
জানিনা কবে ভিরবে এ নাও
তোমার, শুধুই তোমার ঠিকানায়।
২.
হাসি-কান্না
হাসির হৃদয়ে আছে,
কান্নার মাখামাখি,
যেথা তৃপ্ত হয় ভালোবাসা,
ঝড়ে পরে অভিমান।
আনন্দ-ব্যাথার সহবাসে
পোক্ত হয় জীবনকাব্য,
অতপর গতি পায়;
জীবন নামক ক্ষণস্থায়ী
বাবুই পাখির সুচারু বাসা।
৩.
স্বপ্ন যখন উপস্থিত হয়
সম্ভাবনার দ্বারে,
আনন্দ তখন চোখের কোনে
অশ্রু হয়ে ঝরে।
৪.
বিবর্ণতার ধ্বংসস্তুপে
আদর, স্নেহ, ভালোবাসার
একটা শক্তি আছে,
একটা রং আছে,
একটা প্রকাশ আছে।
উপলব্ধিতে আসে না সর্বদা,
শব্দগুলোর গভীরতা।
আমরা বিভ্রান্ত হই,
অকারণ হেলায় হারিয়ে ফেলি;
ভালোবাসার কুঁড়িফুলগুলো।
প্রভাতে ফোঁটার প্রতিক্ষায়,
থেকে থেকে বেচারা ফুলগুলো
পাওয়া না পাওয়ার বেদনা নিয়ে
কুঁড়িতেই ঝড়ে পরে গাছ থেকে।
সময়ের কালচক্রযানে
অনন্ত তৃষ্ণা, অনন্ত হতাশা নিয়ে
বিবর্ণতার ধ্বংসস্তুপে,
হারিয়ে যাওয়া অমূল্যধনকেই
একদিন কাছে পেতে খুঁজে ফিরি।
সেদিন থাকে শুধুই দীর্ঘশ্বাস!
৫.
স্বপ্নের ফানুস
স্বপ্নের ফানুস উড়ে যায়
দূর অজানা গন্তব্যে,
ঝিলমিল করে রঙিন আলো
অমাবস্যার নিকষকালো আকাশে
আজও আমি স্বপ্নে বাসা বাঁধি,
প্রতিক্ষণ স্বপ্নের ফানুস উড়াই;
স্বপ্নবাজ প্রজাপতি হয়ে উড়ে চলি
রংবেরঙের ফুলের বাগানে।
স্বপ্নের ফানুসটি যেদিন
আকাশে উড়বে না,
একবুক ভালোবাসা দিয়ে
আগলে রাখবে না আমাকে;
সেদিন মৃত্যু হবে আমার।
রঙিন প্রজাপতি থেকে
আমি হয়ে যাব,
বিবর্ণ ধূসর তেলাপোকা।
৬.
লাল নীল স্বপ্ন
জীবন বড্ড বেহায়া,
কালের অযাচিত শ্রোতে
ভেসে চলে কচুরিপানার মত;
চলার পথমাঝে, রেখে যায় শুধুই
কিছু ক্ষণিকের স্মৃতির বিস্মৃতি।
স্মৃতির কণা পথে কুড়িয়ে,
জীবন চলছে পথে পথে,
সবাই আছে বন্ধ চোখে
ভালবাসার প্রিয়জন ;
চোখ মেলে দেখি শুধুই একা
আমার ছায়া আর আমি।
নদীর শ্রোতে ভেসে গেল
কত লাল নীল স্বপ্ন,
স্বপ্নগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে
আমিই হলাম স্বপ্ন।
৭.
মনের মানুষের ঠিকানা
ব্যস্ত সচল শহর একদিন ঢেকে যাবে
পুরাতত্ত্ব নামক ধ্বংসস্তুপের আবরণে,
কাছের মানুষ, ভালোবাসার মানুষ
হয়ে যাবে আনন্দবেদনার স্মৃতি;
ঘরের ঘুলঘুলিতে এরপরেও,
নিত্য বাসা বাঁধবে পাখি,
চোখে থাকবে তাদের
অতৃপ্ত অনন্ত স্বপ্ন।
আদরের উপবাসের পরে
পূর্ণ হয় ভালোবাসা।
রঙিন প্রজাপতির দল,
রং ছড়িয়ে ছুটে চলে
অক্লান্ত, দুরন্তগতিতে
মনের মানুষের ঠিকানায়।
মরীচিকার মত অস্পষ্ট
মনের মানুষের ঠিকানা;
এই স্পষ্ট দেখা যায়,
স্পর্শ অনুভব করা যায়,
পরক্ষণে হতাশা, কিছুই নেই,
শুধুই মনের ভ্রম, শুধুই বেদনা।
৮.
জীবনের কম্পাস
সৃষ্টি বড় বেদনার,
ধ্বংসের অমোঘ বিধানে
প্রবাহিত হচ্ছে, মহাকালের মহারথে।
অনেক হয়েছে পথচলা, হে সারথি
এবার থামাও তোমার রথের মাতাল ঘোড়া ;
দেখতে দাও তোমার রূপ, প্রকৃত স্বরূপ।
স্থির হতে দাও আমায়
চলতে পারছি না, আর আমি
জীবনের কম্পাসটি কেবল
প্রিয়তম ধ্রুবের সংস্পর্শ চায়;
ধ্রুবের মধ্যেই আছে মুক্তির আনন্দ।
হে প্রিয়তম ধ্রুব,
তুমি এত সুন্দর, অপাপবিদ্ধ, আনন্দময়;
তবে আগে কেন পাইনি তোমার
এ অরূপ রূপের ছোঁয়া?
শুধু কি চাইনি বলে?
জানিনা কেন চাইনি,
হয়ত ভাগ্যে ছিল না।
আজ প্রদোষকালে যখন উড়ছে গোধূলী
মঙ্গলদীপ জ্বলছে তুলসীবেদিতে
মঙ্গলধ্বনি, কাঁসরধ্বনি ঘোষণা করছে
দিনের অবসান।
না পাওয়ার বেদনায়,
হাহাকার করে ওঠে হৃদয়।
জীবন ধিক্কার দেই তোকে,
এত ক্ষুদ্র কেন তুই?
আমি নিত্য পেতে চাই
ঐ রূপের আহ্বান, স্পর্শ
বিকিয়ে দিয়ে আপন সত্ত্বাকে
রূপান্তরিত হতে চাই,
নতুন রূপে, নতুন বৈভবে।
৯.
দুয়ারে রাঙা দোল
রঙবেরঙের দোলের দিনে
চিত্তে লাগে দোল,
আবির রাঙা হয়ে উঠে
এলোমেলো কালোসাদা মন।
বেলা গিয়ে সন্ধ্যা হল,
যেতে হবে দূর থেকে বহুদূর।
জীবন নামের নৌকায়
পাল তুলে দে আজ।
কি হবে তোর অঙ্ক কষে,
লাভ-ক্ষতির এই নাট্যমঞ্চে?
জীবনের বেখেয়ালি নৌকা
আজ শুধুই বয়ে যায়।
খোল খোল খোল!
দুয়ারে রাঙা দোল,
হৃদয় আজি খোল!
দুঃখ-বেদনা ভুলে গিয়ে
জীবনকে রাঙিয়ে তোল।
১০.
ফুলের মায়াজাল
ফুলে লাল, করে ভাল
কে গো তুমি যাও?
মায়াজাল, হায় কপাল!
আমায় নিয়ে যাও।
যেতে চাই, শুধু কি তাই
হতে চাই তোমার;
সময় নেই, তবু যেতে চাই
মন মানে না আমার।
জীবনতরী কঠিন ভারি,
পারিনা আর বাইতে;
তোমায় করি হৃদয়গতি
কেন পারো না বুঝিতে? 
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।