গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সদস্য হল ৩০০ জন।এই ৩০০ জনের সাথে রয়েছে আরও ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য। জাতীয় সংসদ গঠিত।এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা।২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দেশে অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পায়। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় পরম্পরাগতভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থক। অসাম্প্রদায়িক দলীয় আদর্শের কারণে অর্দ্ধ শতকের বেশি সময় থেকেই দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে ভোট দিয়ে আসছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দশকের পর দশক নিজদের কোন রাজনৈতিক দল তৈরি না করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার অন্যতম প্রধান কারণ হল তাদের অসাম্প্রদায়িক মূলনীতি। এ অসাম্প্রদায়িকতার সাথে আওয়ামী লীগ সংগঠনটি বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলে; গণতন্ত্রের কথা বলে; সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে ন্যায্যতার কথা বলে; ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ কথা বলে। দলের এ চারটি মূলনীতিগুলো অত্যন্ত মহৎ। তবে এই চারটি মূলনীতি দলের উচু পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে সাথে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মীদের মাঝে আরও প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নেতাকর্মীদের মাঝে এ চারটি মূলনীতির অপ্রতুলতা মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে।
শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সমর্থনের কারণে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হাজার বঞ্চনাতেও তাদের নিজস্ব কোন রাজনৈতিক শক্তির কথা ভাবেনি বা তাদের ভাবতে দেয়া হয়নি। প্রায় শতভাগ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেহেতু আওয়ামীলীগের সমর্থক। তাই আওয়ামী লীগ সংগঠনটি দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য অনেক। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মেয়াদ ৫ বছর। এ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ ৩০০টি একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত। জাতীয় সংসদের ৩০০ জন সদস্যের প্রত্যেকে এক একটি নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ সদস্যদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের থেকে শতাংশ হিসেব করলে নূন্যতম ৪০ জন সদস্য থাকার কথা। কিন্তু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং আদিবাসী সহ সংখ্যালঘু সংসদ সদস্য আছে মাত্র ১৮ জন। যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষায় প্রশ্নে অত্যন্ত বেমানান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে সাংসদবৃন্দরা হলেন:
১. শ্রীরমেশ চন্দ্র সেন, (ঠাকুরগাঁও-১)
২.শ্রীমনোরঞ্জন শীল গোপাল (দিনাজপুর-১)
৩. শ্রীসাধন চন্দ্র মজুমদার, (নওগাঁ-১)
৪. শ্রীরনজিৎ কুমার রায়, (যশোর)
৫.শ্রীস্বপন ভট্টাচার্য্য, (যশোর-৫)
৬.শ্রীবীরেন শিকদার, (মাগুরা-২)
৭. শ্রীপঞ্চানন বিশ্বাস, (খুলনা-১)
৮.শ্রীনারায়ণ চন্দ্র চন্দ,(খুলনা-৫)
৯. শ্রীধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, (বরগুনা-১)
১০. শ্রীপংকজ নাথ, (বরিশাল-৪)
১১.শ্রীজুয়েল আরেং মানকিন, (ময়মনসিংহ-১)
১২. শ্রীমানু মজুমদার, (নেত্রকোনা-১)
১৩. শ্রীঅসীম কুমার উকিল, (নেত্রকোনা-৩)
১৪.শ্রীমৃণাল কান্তি দাস,( মুন্সিগঞ্জ-৩)
১৫.শ্রীজয়া সেনগুপ্তা, (সুনামগঞ্জ-২)
১৬. শ্রীকুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, (খাগড়াছড়ি)
১৭. শ্রীদীপংকর তালুকদার, (রাঙামাটি)
১৮. শ্রীবীর বাহাদুর উশৈসিং, (বান্দরবান)
গত সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক ক্ষমতাধর বর্তমান এবং প্রাক্তন মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। যারা শুধুমাত্র স্বদিচ্ছা থাকলে অবহেলিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক কিছুই করতে পারেন। কিন্তু সেই মন্ত্রী এমপিরা কি তাদের দায়িত্ব কর্তব্য ঠিকঠাক পালন করছেন? প্রশ্নটি বর্তমানে একটি অত্যন্ত জাজ্জ্বল্যমান প্রশ্ন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তৃণমূল পর্যায়ের যেকোন সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করলেই এর যথাযথ উত্তর পাওয়া যাবে। এর জন্যে কোন বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করে দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে হবে না।
ঠাকুরগাঁও জেলার শ্রীরমেশ চন্দ্র সেন ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নওগাঁর শ্রীসাধন চন্দ্র মজুমদার ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে, তিনি বর্তমানে দেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন।শ্রীবীর বাহাদুর উশৈসিং পার্বত্য জেলা বান্দরবানে রাজনীতি করেন। তিনি ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বান্দরবান আসন (৩০০ নম্বর) থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। শ্রীস্বপন ভট্টাচার্য্য যশোরের মনিরামপুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। মাগুরা জেলার শ্রীবীরেন শিকদার একজন আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১২ জানুয়ারি যুব ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে তিনি সাংসদ। খুলনার
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ একাদশ জাতীয় সংসদের একজন সাংসদ। তিনি পূর্বে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। খুলনার আরেকজন ১৯৯৬ সাল থেকে বারেবারে নির্বাচিত হওয়া সাংসদ হলেন শ্রীপঞ্চানন বিশ্বাস। তিনি বর্তমানে জাতীয় সংসদের হুইপ হিসেবে দায়িত্বে আছেন ।
দেশের ৩০০ জন সংসদ সদস্যদের সাথে আছে আরও ৫০ জন মহিলা সাংসদ। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে মহিলাদের জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বিধান থাকলেও তারা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না।নারী সাংসদরা ৩০০ সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালের প্রথম সংবিধানে জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য অতিরিক্ত ১৫ টি আসন ১০ বছর মেয়াদে সংরক্ষিত ছিল। ১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ জন করা হয় এবং সংরক্ষণের সময়সীমা ১৫ বছর বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে এ সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য কোনো সংরক্ষিত আসন ছিল না। ১৯৯০ সালে সংবিধানের দশম সংশোধনীর মাধ্যমে মহিলাদের জন্য পরবর্তী ১০ বছর মেয়াদে ৩০টি আসন সংরক্ষিত করা হয়। নারীদের সংরক্ষিত আসনের এ মেয়াদ ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়। এরপর ২০০৪ সালের ১৭ মে চতুর্দশ সংশোধনীতে সংসদে নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ বৃদ্ধির সাথে সাথে আসনের সংখ্যাও ৩০ থেকে ৪৫-এ উন্নীত করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা পাঁচটি বাড়িয়ে ৫০-এ উন্নীত করা হয়। যা বর্তমানে চলমান। সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ার এ নারী সাংসদরা ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনীত হন। ৩০০ আসনের মধ্যে প্রাপ্ত সাংসদ সংখ্যা অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলোর নারী আসনের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরবর্তীতে বর্তমানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের থেকে নির্বাচিত নারী সাংসদ হলেন মাত্র তিনজন।
১৯.বাসন্তী চাকমা, (খাগড়াছড়ি)
২০. অ্যারোমা দত্ত, (কুমিল্লা)
২১. গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, (খুলনা)
তিনজন সংরক্ষিত নারী সাংসদকে নিয়ে বর্তমান বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংসদ হলেন মাত্র ২১ জন। এ সাংসদদের মধ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের হলেন মাত্র পাঁচজন। জাতিগত পরিচয়ে হলেন খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শ্রীকুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, চাকমা সম্প্রদায়ের বাসন্তী চাকমা এবং রাঙামাটির শ্রীদীপংকর তালুকদার। মারমা সম্প্রদায়ের বান্দরবানের শ্রীবীর বাহাদুর উশৈসিং এবং গারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের ময়মনসিংহের শ্রীজুয়েল আরেং মানকিন। যদি আদিবাসী সাংসদদের ধর্মের হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তবে আদিবাসী হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেন শ্রীকুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা; বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেন বাসন্তী চাকমা, শ্রীদীপংকর তালুকদার এবং শ্রীবীর বাহাদুর উশৈসিং। তবে সাংসদ বীর বাহাদুরের পিতা লালমোহন বাহাদুর ছিলেন নেপালি বংশোদ্ভূত হিন্দু সম্প্রদায়ের। ধর্মের বিচারে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাংসদ হলেন দুইজন বাঙালি সম্প্রদায়ের থেকে গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এবং আদিবাসী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের হলেন শ্রীজুয়েল আরেং মানকিন।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তিনজন এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দুইজনকে বাদ দিলে অন্য সাংসদরা সকলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের। সবচেয়ে মজার বিষয় প্রায় এক শতাংশের কম বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাংসদ আছেন তিনজন। একই ঘটনা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও। দেশের বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায় বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায় সম্মিলিতভাবে এক শতাংশ বা এক শতাংশের সামান্য বেশি। তারাও সংখ্যার শতাংশ থেকে প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে ন্যায্য অবস্থানে রয়েছে। সাংসদদের সমানুপাতিক ন্যায্য অবস্থানে নেই শুধুই হিন্দু সম্প্রদায়।আদমশুমারি ছাড়াও প্রতিবছর পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অধীনে বিবিএস বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রকাশ করে৷ ২০১৮ সালে বিবিএস এর প্রদিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৮৮.৪ ভাগ৷ হিন্দু এবং অন্য ধর্মাবলম্বী ১১.৬ ভাগ৷ সেই পরিসংখ্যানে হিন্দুদের শতকরা হার আলাদাভাবে দেওয়া হয়নি।
তবে বিবিএস-এর ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে মোট জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে উল্লেখ করা হয়৷ প্রায় ১০% বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সাংসদ থাকার কথা নূন্যতম ৩৭ জন। কিন্তু বাস্তবে আছে মাত্র ১৬ জন। ৩৫০ জন সংসদ সদস্যদের মধ্যে শতাংশের হিসেবে হিন্দু সাংসদ হলেন মাত্র ৪.৫৭%। যা মোট জনগোষ্ঠীর শতাংশের অর্ধেকেরও কম। একাদশ জাতীয় সংসদে অন্যান্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব তুলনামূলক বেশি। তবে তুলনামূলক একটু বেশি হলেও সংখ্যাটি আশাব্যঞ্জক নয়। অর্ধেকের থেকেও কম। স্মর্তব্য যে, জগতের অধিকাংশ মতবাদই অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রচারিত। অর্থ এবং রাজশক্তি এ দুটি মুখ্য ক্ষমতা মানুষের অন্যান্য গৌণ সকল ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রিত করে। বিষয়টি অর্থশাস্ত্রের প্রণেতা চাণক্য তাঁর দূরদৃষ্টিতে লক্ষ্য করেছেন।
সুখম্য মূলং ধর্ম।
ধর্মস্য মূলমর্থঃ।
অর্থস্য মূলং রাজ্যম্।
রাজ্যমূলমিন্দ্রয়জয়ঃ।
(চাণক্য সূত্র:২-৫)
"সুখের প্রধান কারণ ধর্ম।ধর্মের প্রধান কারণ হল অর্থ।অর্থলাভের প্রধান কারণ রাজ্য।রাজ্য রক্ষার প্রধান সহায় হল ইন্দ্রিয়জয়।"
চাণক্যের সূত্রে পাওয়া যায়- সুখ, ধর্ম অর্থের মূলেই রাজ্য বা রাজশক্তির অংশীদারত্ব। আজ ক্ষমতার ন্যায্য অংশীদারত্ব না থাকাতেই সংখ্যালঘু বিশেষ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং স্বাভিমান দিনেদিনে ম্লান হয়ে যাচ্ছে।দেশের বৃহত্তর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় সহ সংখ্যালঘু প্রতিনিধির সংখ্যাটা যদিও মোটেও আশানুরূপ না হওয়ার বৃহত্তর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীররা দিনেদিনে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও সবেধন নীলমণি যে ২১ জন সাংসদ আছেন তারা চাইলে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।প্রতিনিয়ত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কথা বলে যেভাবে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নির্যাতিত হয়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ নির্যাতন বন্ধ সম্ভব যদি সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সাথে সাথে দেশের আইন সভার সদস্যগণ বিষয়গুলো নিয়ে সংসদ বা সংসদের বাইরে সোচ্চার হয়। দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি পেতাত্মারা আজও সর্বত্র সক্রিয়। তারা চায় না দেশ শান্তিতে থাক, দেশের মানুষেরা শান্তিতে থাক, তারা চায় না দেশের প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের আলো। তারা চায় শুধুই অন্ধকার। এই অন্ধকারে বাস করা পাকিস্তানি পেতাত্মারাই ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার দুঃশাসন পর্যন্ত করেছিল। পাকিস্তানের স্বপ্নে মশগুল হয়ে, এরা আজও স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। জাতীয় সংগীতে বিশ্বাস করে না। শস্যশ্যামলা এ ভূখণ্ড এবং প্রকৃতির প্রতি যে ভালোবাসা আমাদের জাতীয় সংগীতে ব্যক্ত করা হয়েছে, তা এক কথায় অনন্য।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।